বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : জামাত-বিএনপির সময়ও আমাদের উপর এমন অত্যাচার হয়নি!যা বর্তমান সময়ে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় হাতের কব্জি হারানো যুবলীগ কর্মী নাদিম খানের আহত মাসুদ খান এর উপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।
শনিবার দুপুরে পিরোজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পিরোজপুর সদর উপজেলা যুবলীগ হাতের কব্জি হারানো যুবলীগ কর্মী নাদিম খানের এবং আহত মাসুদ খান এর উপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবীতে এ সংবাদ সম্মেলনে মুল বক্তব্য এ কথা বলেন, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মল্লিক স্বপন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিকদার, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম মিরন, জেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক সাদউল্লাহ লিটন, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মানিক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইরতিজা হাসান রাজু, কদমতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খান।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, যুবলীগ কর্মী নাদিম খানকে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় কদমতলা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শিহাব হোসেন, তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন, ভাই এর ছেলে পিরোজপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বায়েজীদ হোসেন সহ ৩২ জনকে নামীয় করে এবং ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে আহত নাদিম খানের ফুফু তামান্না বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ মামলার ৬ নং আসামী মিজান হাওলাদার নামে একজন গ্রেফতার করেছে। মিজান ভৈরমপুর এলাকার মৃত ইউনুস হাওলাদারের পুত্র ও কদমতলা ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
বর্তমান পুলিশ প্রশাসন সহ প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পিরোজপুর সদর থানার ওসি আঃ জাঃ মোঃ মাসুদুজ্জামান গত ৬/৭ মাসে সদর উপজেলার বিভিন্ন সহিংশ ঘটনার ব্যাপারে নিস্ক্রীয় ভুমিকা পালন করছেন। উপরন্তু সরকার দলীয় কর্মীরা কোন ব্যাপারে তার কাছে গেলে সব সময় হেনস্তার স্বীকার হচ্ছেন। তারা বলেন, গত ১৫/১১/২১ তারিখ সদর উপজেলার শংকরপাশায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে পিরোজপুর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহবুব শুভ মারা যায়। গত ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ সিকদার মল্লিক ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য রুহুল আমিন শেখকে (৪৫) চেয়ারম্যান শিহাব হোসেনের ভাই ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন কদমতলায় পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দিয়েছিল। তখন থানায় মামলা দিতে গেলে ওসি মাসুদুজ্জামান তানায় মামলা গ্রহন করেন নাই। এমনকি আদালতের নির্দেশে মামলা নিলেও এখনও কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ইউপি সদস্য রুহুল আমিন শেখ এখনও ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার কারনে এ সকল মামলার সঠিক তদন্ত না হওয়ার কারনে এখনও একর পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। পিরোজপুর সদর থানা পুলিশের নিস্ক্রিয় ভূমিকা আর প্রশাসনের শতভাগ গাফলতির কারণেই কদমতলা ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনের পরও একের পর এক নৃশংস সব হামলার ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছে যুবলীগের নেতারা।
তারা বলেন,কোন এক অজ্ঞাত কারণে পুলিশ কদমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শিহাব হোসেন এর প্রতি একপেশে ভূমিকা পালন করছে। এতে করে ওই ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি তার।
সংবাদ সম্মেলনে কদমতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খান জানান, এ পর্যন্ত কদমতলা ইউনিয়নে ১০ থেকে ১২ টি মামলা হয়েছে এর মধ্যে অধিকাংশ মামলাতেই কদমতলা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সিহাব হোসেন আসামী রয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। বিচার নেই পুলিশ মামলা নেয় না, কোন ভাবে মামলা হলেও ধারা পাল্টে দেয় আসামী ধরে না উল্টো আসামীদের মদদ দেয়। কোন এক অদৃশ্য শক্তির নিয়ন্ত্রনে থেকে পুলিশ কাজ করছে।
গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারী দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় চেয়ারম্যান শিহাব হোসেন জেলে যান। বর্তমানে জামিনে আছেন তিনি।
শিহাব হোসেন একজন সুদ কারবারী দাবী করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিহাব হোসেনের নামে একাধিক মামলা, তার ভাই ফারুক হোসেনের নামে ৭/৮টি মামলা চলমান। ফারুক হোসেনও মাদক মামলায় একাধিকবার আটক হয়॥ এছাড়া উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান বায়জিদ হোসেনের নামেও ৪/৫টি মামলা বিদ্যমান আছে। তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বাইরে বসে এসকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ যুবলীগ নেতাদের।
এই সব জঘন্য ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পরও আসামী গ্রেফতার না হওয়ার পর শিহাব ও তার সহযোগীরা বাদী ও তার পরিবার এবং মামলার স্বাক্ষীদের নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে দাবী করে প্রশাসনের কাছে তাদের নিরাপত্তার দাবী জানান।
এ ঘটনার বিষয়ে কদমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিহাব হোসেনের মোবাইল ফেনে বারবার কল করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জানাযায় মামলার কারনে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন তারা।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১৪ জানুয়ারী) রাতে সদর থানায় ৩২ জনকে নামিয় এবং ২০/২৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে আহত নাদিমের ফুফু তামান্ন। শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিজান হাওলাদার নামে একজন আসামীকে গ্রেফতার করে।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ.জ.মো: মাসুদুজ্জামান মিলু অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিজান নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের চারটি টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।