বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন
হাসিবুল হাসান: পিরোজপুর শহরের পত্রিকা বিক্রির দোকান গুলোতে সকালে একই নামের স্থানীয় দৈনিক জনগণের দুইটি পত্রিকা দেখতে পাওয়া যায়। পত্রিকা দুইটির নাম দৈনিক জনগণ হলেও দুইটির প্রকাশক ও সম্পাদক ভিন্ন ভিন্ন। ‘আমার দেশ আমার অহংকার’ শ্লোগানে দৈনিক জনগণের একটি প্রকাশক ও সম্পাদক কে এম সাঈদ এবং ‘সত্যের সাথে প্রতিদিন’ শ্লোগানে অপর দৈনিক জনগনের প্রকাশক এ্যাডভোকেট সাকিনা আলম লিজা ও সম্পাদক মাঈনুল আহসান মুন্না। অবশ্য দুইটি পত্রিকায় দৈনিক জনগণের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম রয়েছে এ্যাডভোকেট মরহুম শহীদুল আলম নিরু।
একই নামের দৈনিক একটি পত্রিকার দুই রকমের প্রকাশনা হাতে পেয়ে স্থানীয় সংবাদ পাঠক ও সংবাদকর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থেকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ১৯৯২ সালে এ্যাডভোকেট শহীদুল আলম নিরু এর প্রকাশনা “দৈনিক জনগণ: পত্রিকার প্রকাশের ছাড়পত্র পান। যার ডিক্লারেশন নং-১/৯২। তবে ২০০৪ সালে শহিদুল এ্যাডভোকেট শহীদুল আলম নিরু মারা গেলে পত্রিকাটির সরকারি নিয়মানুযায়ী কারো কাছে প্রকাশনা হস্তান্তর হয়নি। এছাড়া পত্রিকাটি দীর্ঘদিন নিয়মিত প্রকাশনা বন্ধ থাকার কারণে ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু আলী মো: সাজ্জাদ হোসেন “দৈনিক জনগণ” পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিলের আবেদন জানিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের বরাবরে চিঠি প্রেরণ করেছেন।
দৈনিক জনগণের একপক্ষের প্রকাশক ও সম্পাদক কে এম সাঈদ জানান, দৈনিক জনগণের প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক শহিদুল আলম নিরু মারা যাবার পর তার উত্তরাধীকারী তার স্ত্রী সাবিহা মাহারু কে তার দুই কন্যা সাকিলা আলম লিজা ও সার্মিলা আলম লিপা ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এই পত্রিকার পরিচালনার একক মালিক হিসেবে পাওয়ার অব এর্টোনি প্রদান করে। সেই ক্ষমতাবলে ২০১৮ সালের ০৪ মার্চ সাবিহা মাহারু এভিডেভিটের মাধ্যেমে কে এম সাঈদ কে পত্রিকার সম্পাদনার জন্য অনুমতি প্রদান করে। এরপরে ২০১৯ সালের ২৪ জুন সাবিহা মাহারু অন্য আরেকটি এভিডেভিটের মাধ্যেমে পত্রিকার প্রকাশনা সত্ত্ব ও সম্পাদনার সকল দায়িত্ব কে এম সাঈদকে প্রদান করে। অত্র তারিখের পর থেকে কে এম সাঈদ নিজে প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দৈনিক জনগণ পত্রিকা প্রকাশ করছে।
কে এম সাঈদ আরো জানান, পত্রিকাটি প্রকাশনা তিনি শুরু করার সময়ে তিনি পত্রিকা সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনি জামা প্রদান করেছেন এবং পত্রিকা প্রকাশে প্রেস পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি চেষ্টা করছেন। তবে বর্তমানে আবার জালিয়াতির করে এ্যাডভোকেট সাকিলা আলম লিজা পত্রিকার প্রকাশকের দাবী করে পত্রিকা প্রকাশ করেছে বলে তা জেলা প্রশাসকের কাছে জানানো হয়েছে।
দৈনিক জনগণ পত্রিকার আরেক পক্ষের সম্পাদক মাইনুর আহসান মুন্না জানান, ২০২২ সালের ০২ জানুয়ারী দৈনিক জনগণ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক মরহুম শহিদুল আলম নিরু এর পারিবারিক উত্তরাধীকারী তার স্ত্রী সাবিহা মাহারু ও কন্যা সার্মিলা আলম লিপা তার অপর কন্যা এ্যাডভোটক সাকিলা আলম লিজা কে লিখিত ভাবে পত্রিকার বিষয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেই ক্ষমতান বলেই ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী প্রকাশক হিসেবে এ্যাডভোটক সাকিলা আলম লিজা দৈনিক জনগণের সম্পাদনার দায়িত্ব লিখিত ভাবে তাকে হস্তান্তর করে।
দৈনিক জনগণ পত্রিকার আরেক পক্ষের প্রকাশক এ্যাডভোকেট সাকিলা আলম লিজা জানান, তার বাবা এ্যাডভোকেট মরহুম শহীদুল আলম নিরু “দৈনিক জনগণ” পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক। তার বাবা মারা যাবার পর উত্তরাধীকার সূত্রে তিনি, তার মা ও বোন এই সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার মা সাবিহা মাহারু ও বোন সার্মিলা আলম লিপার লিখিত সম্মতিতেই তিনি বর্তমানে এই পত্রিকার প্রকাশক এবং তিনি মাইনুর আহসান মুন্নাকে লিখিত ভাবে সম্পাদনার দায়িত্ব দিয়েছেন। অপর আরেক পক্ষ দৈনিক জনগণের মালিকা দাবী করছেন তা সম্পূর্ন জালিয়াতির মাধ্যেম। কে এম সাঈদের সাথে তাদের বা তার মায়ের কোন প্রকার লিখিত চুক্তি কখনোই হয়নি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কে এম সাঈদ দৈনিক জনগণ পত্রিকার প্রকশনা ও সম্পাদনার মালিক দাবী করেছেন। এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন।
দৈনিক জনগণ পত্রিকার প্রকাশের প্রেস পিরোজপুর প্রিন্টিং প্রেস মালিক নুরুল আলম জানান, দৈনিক জনগণ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম শহিদুল আলম নিরুর সাথে তার পত্রিকা প্রকাশের চুত্তি হয়েছিলো। এরপর আর কারো সাথে এই পত্রিকা প্রকাশের চুক্তি হয়নি। তবে বর্তমানে এ্যাডভোকেট সাকিলা আলম লিজার প্রকাশনায় এবং মাইনুর আহসান মুন্নার সম্পাদনায় যে দৈনিক জনগণ পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে তা তার প্রেস দিয়ে হয়। কিন্তু কে এম সাঈদের প্রকাশনা ও সম্পাদনায় যে পত্রিকাটি বের হয় তার প্রিণ্টিং রাইনে তার প্রেসের নাম ব্যবহার করা হলেও তার প্রেস দিয়ে এ পত্রিকা ছাপা হয় না।
একই নামে দুই পত্রিকা প্রকাশের বিষয়ে পিরোজপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান নাসিম আলী বলেন, পত্রিকা প্রকাশনা আইনে একই নামের দুই প্রকাশক হতে প্রকাশ হওয়া অবৈধ। এটি স্থানীয় সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী ভাবে প্রয়োজন।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, একই নামে দুইটি দৈনিক জনগণ পত্রিকার প্রকাশ হতে পারবে না। যে কোন একটি পত্রিকা প্রকাশ পাবে যে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে।