বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০১ অপরাহ্ন

স্বামী-সন্তান-নাতি রেখে বিয়ের দাবিতে ইউপি সদস্যর বাড়িতে গৃহবধুর অনশন

পিরোজপুরে বিয়ের দাবিতে ইউপি সদস্য প্রেমিক মোঃ আল-আমিন (৪৫) এর বাড়িতে অনশনে বসেছেন প্রেমিকা সাহিদা আক্তার (৪০)। রোববার (৮ মে) জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের বাড়িতে এসে অনশন শুরু করেন সাহিদা।
আজ মঙ্গলবার (১০ মে) ৩য় দিনেও দাবি পূরণ না হওয়ায় অনশন অব্যহত রেখেছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সারেংকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম। তবে এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন ইউপি সদস্য আল আমিন।
তিন সন্তানের জননী সাহিদার দাবি আল-আমীন তাকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে কোন উপায় না পেয়ে বিয়ের দাবি নিয়ে তিন দিন ধরে আল-আমিনের বাড়িতে অনশন করছেন। বিয়ে না করলে অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মীর বলেন, চেয়ারম্যানকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়েছে। অনসনকারী নারী বর্তমানে মেম্বারের বাড়িতে আছেন। ইউপি সদস্য আল-আমিন ও একই এলাকার বাবুল মাঝির স্ত্রী সাহিদাকে এলাকাবাসী সাহিদার বাড়িতে আপত্তিকর অবস্থায় ধরেছে বলে স্থানীদের মাধ্যমে শুনেছি। আল-আমিনকে খুজে পেলে আসল বিষয় জানা যাবে।
একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী ওয়ার্ড ০৬ এর ইউপি সদস্য উত্তম মজুমদার গোবিন্দ বলেন, বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। আমরা অন্যান্য ইউপি সদস্যরা বিষয়টি তীব্র নিন্দার চোখে দেখছি ও ধিক্কার জানাচ্ছি। এই মেম্বারকে তিন মাস আগে বলা হয়েছিল বিয়ে না করে যেনো তিনি পরিষদে না আসেন। তারপরেও তিনি একাধিকবার এই কাজ করেছেন। একজন ইউপি সদস্য হিসেবে তার এই কাজের দ্বায়ভার আমাদের সকলের উপরেই বর্তায়।
সারেংকাঠী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য সুচিত্রা রানি বিশ্বাস বলেন, সাহিদা ৩ ছেলের জননী। তার ১ ছেলেই বিবাহিত। আমি তাকে মেম্বারের বাড়িতে পাহাড়া দিচ্ছি। মেম্বার আল-আমিন ও সাহিদার মধ্যে সর্বশেষ যে বিষয়টি হয়েছে তারপরে বিয়ের দাবি নিয়ে সাহিদা ঘরে উঠে বসে আছে। আমি চেয়ারম্যনকে বিষয়টি অবহিত করেছি এবং তিনি আমাকে শাহিদার দিকে সার্বক্ষনিক খেয়াল রাখার জন্য বলেছেন। একটি ঘরোয়া শালিশে সমাধানের আগেই আল-আমিন পালিয়ে গেছে। চেয়ারম্যান এ নিয়ে আজ আবারো শালিশ বসাবে বলে আমি শুনেছি।
তবে ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আল-আমিনের সাথে একধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আল-আমিনের চাচা রিপন হাওলাদার বলেন, বৃহষ্পতিবার সাহিদার বাড়িতে অবিবাহিত মেম্বার আল-আমিন গিয়েছিল এবং তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে বলে শুনেছি। সাহিদার স্বামী ঘটনাস্থলে তখনই পৌছে সাহিদাকে জিজ্ঞাসা করে সে কেনো এমন করেছে। পরে সেখান থেকে আল-আমিন দৌড়ে পালিয়ে যায়। চেয়ারম্যানকে ঘটনার পরপরই অবগত করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সারেংকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মেম্বারের দোষ আছে বলে আমি শুনেছি। এর আগে বহুবার আমি নিজেই মেম্বারকে বিয়ে করার জন্য বলেছি কিন্তু সে শুনে নাই। সাহিদার স্বামীকে ফোন দিয়ে বার বার সমাধানের জন্য আসতে বললেও তিনি আসেননি। তিনি আদালতে গিয়ে বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে শুনেছি।
 স্বরুপকাঠী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবির মোহাম্মদ হাসান জানান, এ ঘটনায় পিরোজপুরের একটি আদালতে সাহিদার স্বামী বাবুল মাঝি বাদী হয়ে সাহিদা ও আল-আমিনসহ আরো কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দিয়েছেন। মামলার কাগজ তদন্তের জন্য থানায় এসে পৌছেছে। পুলিশ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
এ ঘটনার পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মোশারেফ হোসেন  জানান, ইউপি সদস্যর ঘটনার ব্যাপারে আমি আপনার মাধ্যমে শুনেছি। এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। আর সারেংকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি তেমনভাবে জানায়নি। আমি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে খোঁজ নিয়ে দেখছি বিষয়টি আসলে কি ঘটেছে। তদন্ত করে আমি পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
প্রসঙ্গত, বৃহষ্পতিবার বিকালে পিরোজপুরের নেছারাবাদে সারেংকাঠী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: আল-আমিন ও একই ইউনিয়নের বাবুল মাঝির স্ত্রী সাহিদাকে আপত্তিকর অবস্থায় সাহিদার ঘর থেকে এলাকাবাসী উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017 gramersamaj.com
Design & Developed BY NCB IT