শুক্রবার, ০২ Jun ২০২৩, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
হাসিবুল হাসান : পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন। রোববার বিকালে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।উপাচার্য নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে চার বছর এবং অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের ভাই ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ড. কাজী সাইফুদ্দিন পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। তিনি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরের বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী শামসুল হক ও মরহুমা ফাতিমা খাতুনের কৃতি সন্তান তিনি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার অভিজাত ‘আকলমের কাজী’ পরিবারের সন্তান। তার নানা বাড়ি কাউখালী উপজেলার বেতকা গ্রামে এবং বেড়ে উঠেছেন পিরোজপুর শহরে। তার স্ত্রী রোকসানা ইয়াসমিন ঢাকার মিরপুর কলেজে অধ্যাপনা করেছেন এবং একমাত্র কন্যা পুষ্পিতা মিম যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। ড. সাইফুদ্দিন পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৯০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রী অর্জনের পর জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং সাইকোলজিতে পিএসজি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের ডিন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সিন্ডিকেট মেম্বার, শিক্ষক সমিতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বহু সংখ্যক বেশি-বিদেশি সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
কাজী জাহাঙ্গীর আলম আরো জানান, তিনি ভিজিটিং সাইন্টিস্ট হিসাবে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের তকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে মানব মস্তিষ্কের জটিল শ্রবণ প্রক্রিয়ার উপর উচ্চতর পর্যায়ে গবেষণার কাজ করেছেন। তিনি জাপানের বিখ্যাত মিতসুবিসি হিউম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, নারা সায়েন্স সিটি ওয়েভ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব এবং ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ল্যাবে গবেষণামূলক কোর্স করেছেন। পরিবেশ, প্রকৌশল, উগ্রবাদ, কগনেটিভ, চিকিৎসা ও নিউরোসায়েন্স মনোবিজ্ঞানী ড. সাইফুদ্দিন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (শিক্ষা ক্যাডার) সদস্য হিসেবে ইতিপূর্বে পাঁচটি সরকারি কলেজ (রাজশাহী কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাগতার অফার লেটার লাভ করেন। তিনি বি.ইউ.পি, এ.আই.ইউ.বি, ও.ইউ, এ.আই.ইউ.বি সহ বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
এছাড়া বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৬ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক এন্ড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং এ যোগদান করেন। “টেকনোলজি ফর সোশ্যাল” থিমের উপর তিনি তার মৌলিক গবেষণা উপস্থাপন ও বক্তৃতা করে সম্মানজনকভাবে “বেস্ট সাইন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেন। এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সটি আয়োজন করেছিল কেবাংসান বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স (ইটালি)। এছাড়া অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দিনের লেখা এ পর্যন্ত ৩২ টিপুস্তক (বাংলা ও ইংরেজি), ৫০ টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ (আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, রাশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ) রয়েছে। তিনি ৩২ টির বেশি কনফারেন্স প্রসিডিংস আমেরিকা (নিউইয়র্ক, শিকাগো) রাশিয়া, জাপান, (ওসাকা, কোবে, তকুশিমা) জার্মানি, ইংল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, ঢাকা এবং ২২টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা অর্থায়নে কাজ করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খসড়া পরীক্ষা করে ফেরত পাঠায়। ১৮ নভেম্বর ২০২১ তারিখে বিলটি উত্থাপিত হলে সংসদের স্থায়ী কমিটিতে তা পাঠানোর অনুমোদন হয়। বিলটি ‘আইন’ আকারে পাসের জন্য এ বছরের ২৯ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদে উত্থাপন করেন এবং তা পাস হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা এলাকার নাজিরপুর-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়।